রমজানের ফজিলত সমূহ

Share on:
রমজানের ফজিলত সমূহ

মানবজীবনে মাহে রমজান ও রোজার গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য অপরিসীম। ধর্মীয় দিক থেকে রোজা ঈমান ও তাকওয়া তথা খোদাভীতি বৃদ্ধি করে। শারীরিক দিক থেকেও মানুষের রিপু, কামনা, বাসনা, প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ সৃষ্টি করে রোজা। একজন মানুষের সারা জীবনের বছরগুলোতে প্রাপ্ত রমজান মাস ও রোজার প্রতিটি দিন এজন্য প্রতিটি মুসলিম নরনারীর জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান। এজন্য বিশেষ মনোযোগী, আগ্রহী ও তৎপর হতে হয় প্রতিটি মুসলমান নর-নারীকে। রমজান মাস একটি ফজিলত পূর্ণ মাস। এই আরটিকেলে আমরা আপনাদের মাঝে রমজানের ফজিলত সমূহ তুলে ধরতেছি।

আরো পড়ুন : রমজানের হাদীস সমূহ

রমজান মাসের ফজিলত

রমজান মাস শক্তি অর্জন ও দানের মাস। এ মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম মক্কা বিজয়ের জন্য যুদ্ধ করেছেন। তখন তিনি এবং সমস্ত মুসলমান সিয়াম অবস্থায় ছিলেন, আর এ রমজানেই বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়ছিল। এ সমস্ত যুদ্ধে ইসলামের পতাকা সমুন্বত হয়েছিল, মূর্তি এবং পৌত্তলিকতার পতাকা অবনমিত হয়েছিল। এ মাসে মুসলমানদের অনেক যুদ্ধ জিহাদ এবং কুরবানি সংঘঠিত হয়েছে।

রমজানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ও তাঁর সাহাবারা অধিক পরিমাণে শক্তি, সজিবতা এবং ইবাদতের জন্য ধৈর্য ধারণ করার উদ্যম অনুভব করতেন, তাইতো রমজান মাসকে সৎকাজ, ধৈর্য ও দানের মাস বলা হয়। রমজান দুর্বলতা, অলসতা, ঘুমানোর মাস নয়। কোন কোন সিয়াম পালনকারীকে হাত পা ছেড়ে দিয়ে, দিনের বেলায় ঘুমাতে, কাজ কম করতে দেখা যায়। এমন আচরণ সিয়ামের তাৎপর্যের বিরোধী। সিয়ামের উদ্দেশ্যের সাথে মিলে না।

পূর্বেকার মুসলমানেরা রমজান যাপন করতেন তাদের অন্তর এবং অনুভূতি দিয়ে। রমজান আসলে তারা কষ্ট করতেন। ধৈর্যের সাথে দিন যাপন করতেন। আল্লাহর ভয় এবং পর্যবেক্ষণের কথা তাদের স্মরণ থাকত। তার সিয়াম নষ্ট হয় অথবা ত্রুটিযুক্ত হয় এমন সব কিছু থেকে দুরে থাকতেন। খারাপ কথা বলতেন না, ভাল না বলতে পারলে নীরব থাকতেন।

তারা রমজানের রাত্রি যপন করতেন সালাত, কোরআন তেলাওয়াত, আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের অনুসরণ করেই। সিয়ামের উপকার অথবা ফজিলত অনেক। তা গণনা করে শেষ করা যাবে না। তবে খেলাধুলা ও রং তামাশায় মত্তব্যক্তিরা কিংবা অলস শ্রেণির লোকজন যারা সারাদিন ঘুমিয়ে কাটায়, এবং রাত্রে বাজারে ঘুরে বেড়ায় তারা রমজানের এসব ফজিলত থেকে বঞ্চিত থাকবে।

রমজানে যে সকল ফজিলত রয়েছে

১. এ মাসের সাথে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকনের সম্পর্ক রয়েছে ; আর তা হল সিয়াম পালন

হজ যেমন জিলহজ মাসের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণে সে মাসের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে এমনি সিয়াম রমজান মাসে হওয়ার কারণে এ মাসের মর্যাদা বেড়ে গেছে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :—

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ. سورة البقرة : ১৮৩

হে মোমিনগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর—যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। সূরা বাকারা : ১৮৩

রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ইসলাম যে পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত তার একটি হল সিয়াম পালন। এ সিয়াম জান্নাত লাভের একটি মাধ্যম ; যেমন হাদিসে এসেছে :—

من آمن بالله ورسولـه، وأقام الصلاة، وآتى الزكاة، وصام رمضان، كان حقاً على الله أن يدخله الجنة … رواه البخاري

যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনল, সালাত কায়েম করল, জাকাত আদায় করল, সিয়াম পালন করল রমজান মাসে, আল্লাহ তাআলার কর্তব্য হল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো…। (বোখারি)

২. রমজান হল কোরআন নাজিলের মাস

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন:—

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ : البقرة : ১৮৪

রমজান মাস, এতে নাজিল হয়েছে আল-কোরআন, যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী। সূরা বাকারা : ১৮৪

রমজান মাসে সপ্তম আকাশের লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে বায়তুল ইজ্জতে পবিত্র আল-কোরআন একবারে নাজিল হয়েছে। সেখান হতে আবার রমজান মাসে অল্প অল্প করে নবী করিম স.-এর প্রতি নাজিল হতে শুরু করে। কোরআন নাজিলের দুটি স্তরই রমজান মাসকে ধন্য করেছে। শুধু আল-কোরআনই নয় বরং ইবরাহিম আ.-এর সহিফা, তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল সহ সকল ঐশী গ্রন্থ এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে বলে তাবরানী বর্ণিত একটি সহি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। (সহি আল-জামে)
এ মাসে মানুষের হেদায়াত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাজিল হয়েছে তেমনি আল্লাহর রহমত হিসেবে এসেছে সিয়াম। তাই এ দুই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে বেশি বেশি করে কোরআন তিলাওয়াত করা উচিত। প্রতি বছর রমজান মাসে জিবরাইল রাসূলুল্লাহ স.-কে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন এবং রাসূল স.-ও তাকে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন। আর জীবনের শেষ রমজানে আল্লাহর রাসূল দু বার পূর্ণ কোরআন তিলাওয়াত করেছেন। সহি মুসলিমের হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত।

৩. রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় ও জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় শয়তানদের

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেন :—

إذا جاء رمضان فتحت أبواب الجنة، وأغلقت أبواب النار، وصفدت الشياطين. وفي لفظ : (وسلسلت الشياطين) رواه مسلم

যখন রমজান মাসের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করা হয়। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে—‘শয়তানদের শিকল পড়ানো হয়। (মুসলিম)

তাই শয়তান রমজানের পূর্বে যে সকল স্থানে অবাধে বিচরণ করত রমজান মাস আসার ফলে সে সকল স্থানে যেতে পারে না। শয়তানের তৎপরতা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে দেখা যায় ব্যাপকভাবে মানুষ তওবা, ধর্মপরায়ণতা, ও সৎকর্মের দিকে অগ্রসর হয় ও পাপাচার থেকে দূরে থাকে। তারপরও কিছু মানুষ অসৎ ও অন্যায় কাজ-কর্মে তৎপর থাকে। কারণ, শয়তানের কু-প্রভাবে তারা অনেক বেশি প্রভাবিত হয়ে পড়েছে।

৪. রমজান মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদর

আল্লাহ তাআলা বলেন:—

لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ ﴿৩﴾ تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ ﴿৪﴾ سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ ﴿৫﴾ (القدر: ৩-৫)

লাইলাতুল কদর সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সে রজনি উষার আবির্ভাব পর্যন্ত। সূরা আল-কদর : ৩-৫

৫. রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেন :—

لكل مسلم دعوة مستجابة، يدعو بـها في رمضان. رواه أحمد

রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়। (মুসনাদ আহমদ)

অন্য হাদিসে এসেছে—

إن لله تبارك وتعالى عتقاء في كل يوم وليلة، (يعني في رمضان) وإن لكل مسلم في كل يوم وليلة دعوة مستجابة. صحيح الترغيب والترهيب

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রতি রাত ও দিবসে মুসলিমের দোয়া-প্রার্থনা কবুল করা হয়। সহি আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব

তাই প্রত্যেক মুসলমান এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের কল্যাণের জন্য যেমন দোয়া-প্রার্থনা করবে, তেমনি সকল মুসলিমের কল্যাণ, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জ্ঞাপন করবে।

৬. রমজান পাপ থেকে ক্ষমা লাভের মাস

যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপসমূহ ক্ষমা করানো থেকে বঞ্চিত হলো আল্লাহর রাসূল তাকে ধিক্কার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন:—

.. رغم أنف رجل، دخل عليه رمضان، ثم انسلخ قبل أن يغفر له. .رواه الترمذي

ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করা হয়নি। বর্ণনায়: তিরমিজি

সত্যিই সে প্রকৃত পক্ষে সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত যে এ মাসেও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল।

৭. রমজান জাহান্নাম থেকে মুক্তির লাভের মাস

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—

إذا كان أول ليلة من رمضان صفدت الشياطين ومردة الجن، وغلقت أبواب النار، فلم يفتح منها باب، وفتحت أبواب الجنة فلم يغلق منها باب، وينادي مناد كل ليلة : يا باغي الخير أقبل! ويا باغي الشر أقصر! ولله عتقاء من النار، وذلك في كل ليلة. رواه الترمذي

রমজান মাসের প্রথম রজনির যখন আগমন ঘটে তখন শয়তান ও অসৎ জিনগুলোকে বন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, এ মাসে আর তা খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এ মাসে তা আর বন্ধ করা হয় না। প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে ঘোষণা দিতে থাকে যে, হে সৎকর্মের অনুসন্ধানকারী তুমি অগ্রসর হও ! হে অসৎ কাজের অনুসন্ধানকারী তুমি থেমে যাও ! এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। (তিরমিজি)

৮. রমজান মাসে সৎকর্মের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়

যেমন হাদিসে এসেছে যে, রমজান মাসে ওমরাহ করলে একটি হজের সওয়াব পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, বরং, রমজান মাসে ওমরাহ করা আল্লাহর রাসূলের সাথে হজ আদায়ের মর্যাদা রাখে। এমনিভাবে সকল ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল সৎকাজের প্রতিদান কয়েক গুণ বেশি দেয়া হয়।

৯. রমজান ধৈর্য ও সবরের মাস

এ মাসে ঈমানদার ব্যক্তিগণ খাওয়া-দাওয়া, বিবাহ-শাদি ও অন্যান্য সকল আচার-আচরণে যে ধৈর্য ও সবরের এত অধিক অনুশীলন করেন তা অন্য কোন মাসে বা অন্য কোন পর্বে করেন না। এমনিভাবে সিয়াম পালন করে যে ধৈর্যের প্রমাণ দেয়া হয় তা অন্য কোন ইবাদতে পাওয়া যায় না।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন:—

إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ. الزمر: ১০

ধৈর্যশীলদের তো বিনা হিসাবে পুরস্কার দেয়া হবে। সূরা যুমার : ১০

যে দশ কারণে রমজান এত ফজিলতপূর্ণ

  • সিয়াম ও কিয়াম
  • কোরআন নাজিল
  • কোরআন তিলাওয়াত
  • আমলের সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি
  • কল্যাণের ঘোষণা
  • দোয়া কবুল ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি
  • ক্ষমা লাভ করা
  • সারা বছরের জন্য ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ
  • দানশীলতা
  • লাইলাতুল কদর

সিয়ামের কিছু ফজিলত

১. আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজের সাথে সিয়ামের সম্পর্ক ঘোষণা করেছেন।
এমনিভাবে তিনি সকল ইবাদত-বন্দেগি থেকে সিয়ামকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছেন।

যেমন তিনি এক হাদিসে কুদসিতে বলেন :—

كل عمل ابن آدم لـه إلا الصيام، فإنه لي وأنا أجزى به. رواه مسلم

মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু সিয়াম শুধু আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব। (মুসলিম)

এ হাদিস দ্বারা আমরা অনুধাবন করতে পারি নেক আমলের মাঝে সিয়াম পালনের গুরুত্ব আল্লাহর কাছে কত বেশি।

তাই সাহাবি আবু হুরায়রা রা. যখন বলেছিলেন –

يا رسول الله مرني بعمل، قال عليك بالصوم فإنه لا عدل لـه. رواه النسائي

হে রাসূলুল্লাহ ! আমাকে অতি উত্তম কোন নেক আমলের নির্দেশ দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : তুমি সিয়াম পালন করবে। মনে রেখ এর সমমর্যাদার কোন আমল নেই। (নাসায়ি)

সিয়ামের এত মর্যাদার কারণ কী তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভাল জানেন। তবে, আমরা যা দেখি তা হল, সিয়াম এমন একটি আমল যাতে লোক দেখানো ভাব থাকে না। বান্দা ও আল্লাহ তাআলার মধ্যকার একটি অতি গোপন বিষয়। সালাত হজ, জাকাতসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি কে করল তা দেখা যায়। পরিত্যাগ করলেও বুঝা যায়। কিন্তু সিয়াম পালনে লোক দেখানো বা শোনানোর ভাবনা থাকে না। ফলে সিয়ামের মধ্যে এখলাস বা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা নির্ভেজাল ও বেশি থাকে।

যেমন আল্লাহ বলেন :—

يدع شهوته وطعامه من أجلي

সিয়াম পালনকারী আমার জন্যই পানাহার ও যৌনতা পরিহার করে।

তাই সিয়াম পালনকারী আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কিছুর আশা করে না।

২. সিয়াম আদায়কারী বিনা হিসাবে প্রতিদান লাভ করে থাকেন।
কিন্তু অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি ও সৎ কর্মের প্রতিদান বিনা হিসাবে দেয়া হয় না। বরং প্রত্যেকটি নেক আমলের পরিবর্তে আমলকারীকে দশ গুণ থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত প্রতিদান দেয়া হয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—

كل عمل ابن آدم يضاعف الحسنة بعشر أمثالـها إلى سبع مئة ضعف. قال الله عز وجل: ( إلا الصوم فإنه لي وأنا أجزى به . . .

মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান দশ থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-কিন্তু সিয়ামের বিষয়টা ভিন্ন। কেননা সিয়াম শুধু আমার জন্য আমিই তার প্রতিদান দেব। বর্ণনায় : মুসলিম

সারা জাহানের সর্বশক্তিমান প্রতিপালক আল্লাহ নিজেই যখন এর পুরস্কার দেবেন তখন কি পরিমাণে দেবেন?

ইমাম আওজায়ী র. এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আল্লাহ যে সিয়াম আদায় কারীকে প্রতিদান দেবেন তা মাপা হবে না, ওজন করা হবে না।

৩. সিয়াম ঢাল ও কুপ্রবৃত্তি থেকে সুরক্ষা

সিয়াম পালনের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কু-প্রবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকার দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন :—

يا معشر الشباب! من استطاع منكم الباءة فليتزوج، فإنه أغض للبصر، وأحصن للفرج، ومن لم يستطع فعليه بالصوم، فإنه له وجاء. متفق عليه

হে যুবকেরা ! তোমাদের মধ্যে যে সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা বিবাহ দৃষ্টি ও লজ্জাস্থানের সুরক্ষা দেয়। আর যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে না সে যেন সিয়াম পালন করে। কারণ এটা তার রক্ষা কবচ। বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম

এমনিভাবে সিয়াম সকল অশ্লীলতা ও অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত রাখে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—

والصيام جنة، فإذا كان يوم صوم أحدكم فلا يرفث يومئذ ولا يصخب، فإن سابه أحد أو قاتله فليقل إني امرأ صائم. رواه مسلم

সিয়াম হল ঢাল। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে সিয়াম পালন করবে সে যেন অশ্লীল আচরণ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। যদি তার সাথে কেউ ঝগড়া বিবাদ কিংবা মারামারিতে লিপ্ত হতে চায় তবে তাকে বলে দেবে আমি সিয়াম পালনকারী। বর্ণনায় : মুসলিম

সিয়াম পালনকারী যেমনি নিজের অন্তরকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে তেমনি সকল অশ্লীল আচরণ, ঝগড়া-বিবাদ, অনর্থক কথা ও কাজ থেকে নিজের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হেফাজত করবে।

৪. সিয়াম জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল

যেমন হাদিসে এসেছে –

الصيام جنة، وحصن حصين من النار. رواه أحمد

সিয়াম হল ঢাল ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার মজবুত দুর্গ। বর্ণনায় : আহমদ।

বোখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে –

من صام يوما في سبيل الله باعد الله وجهه عن النار سبعين خريفا. رواه مسلم

যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর পথে সিয়াম পালন করবে আল্লাহ তার থেকে জাহান্নামকে এক খরিফ (সত্তুর বছরের) দুরত্বে সরিয়ে দেবেন। বর্ণনায়: মুসলিম

উলামায়ে কেরাম বলেছেন, আল্লাহর পথে সিয়াম পালনের অর্থ হল : শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সিয়াম পালন করা। এমনিভাবে আল্লাহ তাআলা বহু সিয়াম পালনকারীকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।

যেমন হাদিসে এসেছে –

إن لله تعالى عند كل فطر عتقاء من النار، وذلك كل ليلة. رواه أحمد

ইফতারের সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আর এটা রমজানের প্রতি রাতে। বর্ণনায় : আহমদ

৫. সিয়াম হল জান্নাত লাভের পথ

হাদিসে এসেছে –

عن أبي هريرة رضي الله عنه أنه قال: يا رسول الله مرني بأمر ينفعني الله به، قال: عليك بالصوم فإنه لا مثل له. رواه النسائي

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিন যার দ্বারা আমি লাভবান হতে পারি। তিনি বললেন : তুমি সিয়াম পালন করবে। কেননা, এর সমকক্ষ কোন কাজ নেই। বর্ণনায় : নাসায়ি

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্য সিয়ামের সাথে কোন আমলের তুলনা হয় না। সিয়াম পালনকারীদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহের আরেকটি দৃষ্টান্ত হল তিনি সিয়াম পালনকারীদের জন্য জান্নাতে একটি দরজা নির্দিষ্ট করে দেন। যে দরজা দিয়ে সিয়াম পালনকারীরা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করবে না।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—

إن في الجنة بابا يقال له الريان، يدخل منه الصائمون يوم القيامة لا يدخل منه أحد غيرهم، يقال: أين الصائمون ؟ فيقومون لا يدخل منه أحد غيرهم، فإذا دخلوا أغلق، فلم يدخل منه أحد. متفق عليه

জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে। যার নাম রইয়ান। কেয়ামতের দিন সিয়াম পালনকারীরাই শুধু সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, সিয়াম পালনকারীরা কোথায় ? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য। যখন তারা প্রবেশ করবে দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে ফলে তারা ব্যতীত অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম

৬. সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েও উত্তম

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :—

والذي نفس محمد بيده لخلوف فم الصائم أطيب عند الله من ريح المسك. رواه الشيخان

যার হাতে মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবন সে সত্তার শপথ, সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহ তাআলার কাছে মেশকের ঘ্রাণ হতেও প্রিয়। বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম।

মুখের গন্ধ বলতে পেট খালি থাকার কারণে যে গন্ধ আসে সেটাকে বুঝায়। দাঁত অপরিষ্কার থাকার কারণে যে গন্ধ সেটা নয়।

৭. সিয়াম ইহকাল ও পরকালের সাফল্যের মাধ্যম

যেমন হাদিসে এসেছে –

للصائم فرحتان: فرحة عند فطره، وفرحة عند لقاء ربه. متفق عليه

সিয়াম পালনকারীর জন্য দুটি আনন্দ : একটি হল ইফতারের সময় অন্যটি তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের সময়। বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম

ইফতারের সময় আনন্দ হল এ কারণে যে সিয়াম পূর্ণ করতে পারল ও খাবার-দাবারের অনুমতি পাওয়া গেল। এটা বাস্তব সম্মত আনন্দের বিষয় যা আমাদের সকলের বুঝে আসে ও অনুভব করি। অপরদিকে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের যে আনন্দ তা অনুভব করতে আমরা এখন না পারলেও কেয়ামতের দিন পারা যাবে। যখন সকল মানুষ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহমুখী থাকবে।

৮. সিয়াম কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবে

হাদিসে এসেছে –

عن عبد الله بن عمرو أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: (الصيام والقرآن يشفعان للعبد يوم القيامة، يقول الصيام أي رب: منعته الطعام والشهوات بالنهار، فشفعني فيه. ويقول القرآن : منعته النوم بالليل، فشفعني فيه. قال: فيشفعان. رواه أحمد

আব্দুল্লাহ বিন আমর থেকে বর্ণিত যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : সিয়াম ও কোরআন কেয়ামতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে হে প্রতিপালক ! আমি দিনের বেলা তাকে পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। কোরআন বলবে হে প্রতিপালক ! আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। তিনি বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে। বর্ণনায় : আহমদ

৯. সিয়াম হল গুনাহ মাফ ও গুনাহের কাফফারা

সিয়াম হল অনেকগুলো নেক আমলের সমষ্টি। আর নেক আমল পাপকে মুছে দেয়।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :—

إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ (سورة هود:114)

সৎকর্ম অবশ্যই পাপসমূহ মিটিয়ে দেয়। সূরা হুদ : ১১৪

বহু হাদিস রয়েছে যা প্রমাণ করে যে, নেক আমলকে বিভিন্ন ছোট খাট পাপ সমূহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। অর্থাৎ নেক আমলের কারণে গুনাহ সমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।

যেমন হাদিসে এসেছে –

فتنة الرجل في أهله وماله وجاره تكفرها الصلاة والصيام والصدقة. رواه البخاري ومسلم

মানুষ যখন পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশী ও ধন-সম্পদের কারণে গুনাহ করে ফেলে তখন সালাত, সিয়াম, সদকা সে গুনাহগুলোকে মিটিয়ে দেয়। বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম

আর রমজান তো গুনাহ মাফ ও মিটিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে আরো বেশি সুযোগ দিয়েছে।

হাদিসে এসেছে –

من صام رمضان إيمانا واحتسابا غفر لـه ما تقدم من ذنبه. رواه الشيخان

যে রমজান মাসে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে সিয়াম পালন করবে তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম

ইহতিসাবের অর্থ হল আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার পাওয়া যাবে এ দৃঢ় বিশ্বাস রেখে নিষ্ঠার সাথে সন্তুষ্টচিত্তে আদায় করা।

হাদিসে আরো এসেছে –

الصلوات الخمس والجمعة إلى الجمعة ورمضان إلى رمضان مكفرات لما بينهن إذا اجتنبت الكبائر. رواه مسلم

পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এর মধ্যবর্তী সময় ও এক জুমআ থেকে অপর জুমআও এক রমজান থেকে অপর রমজানের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সে সকল পাপ হয়ে যায় তার কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) হিসেবে সালাতকে গ্রহণ করা হয়, যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায়।
সিয়াম ছোট পাপগুলোকে মিটিয়ে দেয় আর তাওবা করলে কবিরা গুনাহ মাফ করা হয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন :—

إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلًا كَرِيمًا( النساء :31)

তোমাদেরকে যা নিষেধ করা হয়েছে তার মধ্যে যা গুরুতর তা হতে বিরত থাকলে তোমাদের লঘুতর পাপগুলো ক্ষমা করে দেব। এবং তোমাদের সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব। সূরা নিসা : ৩১

এ আয়াত ও হাদিস দুটো দ্বারা প্রমাণিত হল আল্লাহর পক্ষ থেকে যে ক্ষমার ওয়াদা করা হয়েছে তা তিনটি শর্ত সাপেক্ষে।

প্রথম শর্ত

রমজানের সিয়াম পালন করতে হবে ঈমানের সাথে। অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান এবং সিয়াম যে একটি ফরজ ইবাদত এর প্রতি বিশ্বাস। সিয়াম পালনকারীকে আল্লাহ যে সকল পুরস্কার দেবেন তার প্রতি বিশ্বাস রাখা।

দ্বিতীয় শর্ত

সিয়াম পালন করতে হবে ইহতিসাবের সাথে। ইহতিসাব অর্থ হল আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াব ও পুরস্কারের আশা করা, তাকে সন্তুষ্ট করতেই সিয়াম পালন করা আর সিয়ামকে বোঝা মনে না করা।

তৃতীয় শর্ত

কবিরা গুনাহ থেকে দূরে থাকতে হবে। কবিরা গুনাহ ঐ সকল পাপকে বলা হয় যেগুলোর ব্যাপারে ইহকালীন শাস্তির বিধান দেয়া হয়েছে, পরকালে শাস্তির ঘোষণা রয়েছে, অথবা আল্লাহর ও তার রাসূলের পক্ষ থেকে লানত (অভিসম্পাত) বা ক্রোধের ঘোষণা রয়েছে। যেমন, শিরক করা, সুদ খাওয়া, এতিমের সম্পদ আত্মসাত করা, ব্যভিচার করা, জাদু-টোনা, অন্যায় হত্যা, মাতা-পিতার সাথে দুর্ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ, মিথ্যা সাক্ষ্য, মিথ্যা মামলা, মাদক সেবন, ধোঁকাবাজি, মিথ্যা শপথ, অপবাদ দেয়া, গিবত বা পরদোষচর্চা, চোগলখোরি, সত্য গোপন করা -ইত্যাদি।

কোন ধরনের সিয়াম এ সকল ফজিলত অর্জন করতে পারে

যে সকল ফজিলত ও সওয়াবের কথা এতক্ষণ আলোচনা করা হল তা শুধু ঐ ব্যক্তি লাভ করবে যে নিম্নোক্ত শর্তাবলি পালন করে সিয়াম আদায় করবে।

(১) সিয়াম একমাত্র আল্লাহর জন্য আদায় করতে হবে। মানুষকে দেখানো বা শোনানো অথবা মানুষের প্রশংসা অর্জন কিংবা স্বাস্থ্যের উন্নতির নিয়তে সিয়াম আদায় করবে না।

(২) সিয়াম আদায়ের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূলের সুন্নত অনুসরণ করতে হবে। সেহরি, ইফতার, তারাবীহসহ সকল বিষয় রাসূলের সুন্নত অনুযায়ী আদায় করতে হবে।

(৩) শুধু খাওয়া-দাওয়া ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকলে যথেষ্ট হবে না। মিথ্যা, পরনিন্দা, অশ্লীলতা, ধোঁকাবাজি, ঝগড়া-বিবাদ সহ সকল প্রকার অবৈধ কাজ হতে বিরত থাকতে হবে। মুখ যেমন খাবার থেকে বিরত থাকে, তেমনিভাবে চোখ বিরত থাকবে অন্যায় দৃষ্টি থেকে, কান বিরত থাকবে অনর্থক কথা ও গান-বাজনা শোনা থেকে, বা বিরত থাকব অন্যায়-অসৎ পথে চলা থেকে।

সিয়াম পালনে মহান উদ্দেশ্য এটাই যে, সিয়াম পালনকারী শরিয়তের দৃষ্টিতে সকল প্রকার অন্যায় ও গর্হিত আচার-আচরণ থেকে নিজেকে হেফাজত করবে। অতএব সিয়াম হল সকল ভাল বিষয় অর্জন ও অন্যায়-গর্হিত কাজ ও কথা বর্জন অনুশীলনের একটি শিক্ষালয়।

তাইতো দেখা যায় রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :—

من لم يدع قول الزور والعمل به والجهل فليس لله حاجة أن يدع طعامه وشرابه. رواه البخاري

যে মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। বর্ণনায় : বোখারি

তিনি আরো বলেছেন :—

رب صائم حظه من صيامه الجوع والعطش، ورب قائم حظه من قيامه السهر. رواه أحمد

অনেক সিয়াম পালনকারী আছে যারা তাদের সিয়াম থেকে শুধু ক্ষুধা ও পিপাসা অর্জন করে। আবার অনেক সালাত আদায়কারী আছে যারা তাদের সালাত থেকে শুধু রাত-জাগা লাভ করে থাকে। (এ ছাড়া আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন প্রতিদান লাভ করে না) বর্ণনায় : আহমদ

উপসংহার

আল্লাহতালা প্রতিটি মুসলমানদের জন্য এই রমজান মাসকে ফজিলত পূর্ণ মাস হিসেবে প্রদান করেছেন প্রত্যেকটি মুসলমানের উচিত এই রমজান মাসে আল্লাহর সঠিকভাবে ইবাদত করা ও সিয়াম পালন করা এবং রমজানের ফজিলত সমূহ অর্জন করা। আর্টিকেলটিতে আমরা আপনাদের রমজানের বিভিন্ন ফজিলত সম্বন্ধে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি থেকে আপনারা রমজানের ফজিলত সম্বন্ধে ধারণা লাভ করতে পেরেছেন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site is protected by reCAPTCHA and the Google Privacy Policy and Terms of Service apply.

Related Posts

Disclaimer: All trademarks, logos, images, and brands are property of their respective owners. If you have any opinion or request or you find any bug/issues, please Contact Us